শুদ্ধতম অনুভূতি

পৃথিবীর শুদ্ধতম অনুভূতির নাম স্নেহ। ভালবাসার অন্য সমস্ত ফরম্যাটের সূচনাতে আদান- প্রদানের একটা বিষয় থাকে। কিন্তু স্নেহ জিনিসটা শুরুই হয় একটা লস প্রজেক্ট হিসাবে।
বিষয়টা আগে বুঝি নি। মা-বাবার একমাত্র সন্তান তো। পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিলাম বহুদিন। ভালবাসা পাওয়াটা একটা স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। কেউ ভালবাসলে প্রতিদানে আমিও তাকে ভালবাসতাম। আমি আগ বাড়িয়ে কাউকে ভালবাসিনি। দরকার পড়ে নি। কিন্তু হঠাৎই একদিন সব হিসাব এলোমেলো করে দিল একজন।
ছোট্ট একটা মানুষ। ১৮ ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকে। কোলে নিতে গেলে কাপড়- চোপড় নোংরা করে দেয়। মাঝে মাঝে পিট পিট করে তাকায়। আমি যে ওর কে তা আলাদা করে জানেও না। কিন্তু আমি ওর অনেক কিছু জেনে গেছি। লাল জিনিস দেখলে ও সেইদিকে তাকিয়ে থাকে। ও যখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদে, তখন ওকে কোলে নিয়ে ঝাঁকালে ও হেসে ফেলে। ওর থুতনিটা ছিল একটা সুইচের মত। টিপ দিলেই হাসত। কিন্তু তবু ও লস প্রজেক্ট। ভালবাসার জবাবে ফিরতি ভালবাসা দিতে পারে না। মুখে কথাই যে ফোটে নি। তবু এই ছোট্ট মানুষটাকে ভালবেসেই চললাম।
ওর প্রতি আমায অব্যাখেয় ভালবাসার কারণে অন্য সমস্ত ভালবাসার ব্যাখ্া বুঝতে শুরু করলাম। মা-বাবা কী কারণে, কোন আনন্দে সন্তানকে ভালবসেন সেটা বুঝলাম। ওকে দশ মিনিট সামলাতে গিয়েই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। আর সৃিষ্টিকর্তা অামাদের মত নাদান সৃষ্টিকূলকে কীভাবে সহ্য করেন তা ভাবতেই আমার ঈশ্বর ভক্তি আরো বেড়ে গেল। ও আমার জীবনে না আসলে আমি জানতামই না ভালবাসা পাওয়ার চাইতে দেওয়াতেই বেশি আনন্দ। স্নেহ মানুষকে মানবিক করে , পরিশীলীত করে। আমাকে একটু হলেও মানবিক করে তোলার ক্রেডিটটা তার পাওনা।
আমার জীবনে প্রথম স্নেহের উৎসই হল সে-
প্রজ্ঞা পারমিতা। আমার ছোট বোন। প্রচণ্ড বুদ্ধিমতী। কিন্তু অসহ্য রকম দুষ্টু। আশ্চর্য রকম মিষ্টি। অাগামীকাল ওর জন্মদিন। ঈশ্বর ওর মঙ্গল করুন।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s