একসময় সিনেমার স্ক্রিপ্ট আর বীজগণিতের অঙ্কে কোন তফাৎ ছিল না। চিরচেনা ফর্মুলা, কেবল সংখ্যা বা বর্ণ এদিক ওদিক হতে পারে। গল্পের বিষয়বস্তু ঠিক হওয়ার আগেই প্রযোজক, পরিচালক, আর চিত্রনাট্যকার বসে ঠিক করতেন, ৭টা গান, ৫টা ফাইটিং সিন, ২টা কিস সিন থাকবে , এর মধ্যে ৩টা গানের শুটিং ব্যাংককে হবে। ব্যস, এবার চিত্রনাট্যকারকে বলা হল- এই ফমুর্লায়একটা স্ক্রিপ্ট লিখে দিতে।
বিরক্ত হয়ে যদি ভারতীয় ছবি দেখতে গেলেন তো সেখানেও ফমুর্লা। কোন কোন ছবি দেখলেই বোঝা যায, গল্পকে ছাপিয়ে তথাকথিত ‘সাহসী’ দৃশ্য দেখানোই পরিচালকের মূল লক্ষ্য ছিল। কোন্ জিনিসটা গল্পের প্রয়োজনে এসেছে, আর কোনটার কারণে গল্প বানানো হয়েছে- সেটা বোঝার মত বোধবুদ্ধি কিন্ত দর্শকের আছে।
সেদিক দিয়ে #আয়নাবাজি বিরাট ব্যতিক্রম। সমস্ত ফর্মুলাকে উল্টেপাল্টে দিল। একেবারেই অন্যরকম গল্প।
শুরুতে খুব বেশি প্রত্যাশা নিয়ে দেখতে বসি নি। বন্ধুরা একসাথে হ্যাংআউট করতে যাওযাই একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল।
সাথে আমার বিদেশী সহকর্মীটা ছিল। ও বাংলাদেশকে ভালবাসে কিন্তু বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে এখনো ওর তেমন ধারণা গড়ে ওঠে নি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ভাল মানের একটা বাংলা ছবি ওকে দেখাব। সে দিক দিয়ে আয়নাবাজি একদম পারফেক্ট মনে হয়েছিল আমার কাছে। মেকিং যে ভাল হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু শেষ মেশ কী হল, জানেন?ছবি যখন শেষ, যখন নাম উঠতে থাকল, তখন কোন কোন বাঙালি উঠে যেতে থাকল কিন্তু আমার বিদেশী বন্ধু বসেই আছে। বললাম, যাবা না? ও হাঁ করে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আর একটু থাকি।’ ব্যাকগ্রাউন্ডে তখন বাজছে- লাগ, ভেল্কি লাগ, আয়নাবাজির ভেল্কি লাগ। আমি বুঝলাম, ভেল্কি লেগে গেছে। অমিতাভ রেজার সৃষ্টির গৌরব তখন আমার বাঙালি বাংলাদেশী সত্তাকে ছুঁয়ে ফেলেছে। ওই বিদেশী তখন আবিষ্ট আর আমি কৃতজ্ঞ অমিতাভের প্রতি।
অভিনযের কথা আর কী বলব? চঞ্চল চৌধুরী ভাল অভিনেতা জানতাম কিন্তু এমন অসহ্য সুন্দর একটা পার্ফরমেন্সের জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলাম না। প্রতিটা ক্যারেক্টারে যখন চঞ্চলের রুপান্তর ঘটছিল তখন মুগ্ধ হয়ে লক্ষ্য করলাম, একেকজনের ইডিওসিনক্রেসি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক অত্যন্ত মুন্সীয়ানার পরিচয দিয়েছেন। অসংস্কৃত দুশ্চরিত্র প্রথম অপরাধী কথায় কথায় কুঁচকিতে হাত দেয়, দ্বিতীয়জন অপ্রকৃতিস্থের মত ঘাড় গুঁজে তাকিয়ে থাকে আর চিৎকার করে ইংরেজি ফুটায়। তৃতীয় জন তো ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। আত্মগত স্বরে কিছুক্ষণ পর পর রেটরিক কোয়েশ্চেনের মত করে লোকটা ‘হুম’ করে শব্দ করে। তার নিয়ন্ত্রণকামী মানসিকতা প্রকাশরে জন্য এর চেয়ে ভাল কোন বৈশিষ্ট্য কিছু কি হতে পারত? মনে হয় না।
আমার শহরটাকে এর আগে আমার কাছে কোন ছবিই এভাবে তুলে ধরে নি। হলিউডের ছবির তুষারপাত, ছবির মত সাজানো রাস্তাঘাট দেখতে খারাপ লাগে নি কখনো। কিন্তু মনের কোণে এই অনুভূতিটা থাকত যে, ওগুলো সব পরের বাড়ির চিত্র। আমার পারিপাশ্বির্কতার সাথে ওসবের কোন মিল নেই। এমনকি ভারতীয় বাংলা ছবিতে ভাষা আর চেহারায় নিজেদের সাথে এত মিল থাকা সত্তেও কোনদিন নিজের চারপাশটাকে রিলেট করতে পারি নি। ওদের নায়ক নায়িকা কলকাতার যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, সেটা আমার অচেনা। কিন্তু আয়নাবাজির সেটিং দেখে কিছুক্ষণ পরপর আমার মুখ দিয়ে বের হয়েছে- আরে এটা আমার বাড়ির রাস্তা! আরে এটা অমুক সরণি, দেখেছিস ্ওই ফ্লাইওভারের কাছে গিয়ে শুটিং করছে! সবাইকে ছাপিয়ে বিদেশীটা আবার সবার আগে বলে উঠল, “শ্য্যামা, দেখ, ওল্ড ডাকা”।
আয়নাবাজির এই বিশাল জনপ্রিয়তার মূলে বোধহয় এটাই ছিল। আমরা অনেকদিন পরে একটা মুভি পেয়েছিলাম যেটা আমাদের। সেটিং আামাদের , অ্যাকসেন্ট আমাদের। তবু অভিনয় আর গল্পটা দেশ, কাল, ছাপিয়ে আবেদন তৈরি করতে সক্ষম।
রোমান্সের ক্ষেত্রে মাত্রাবোধ দেখিয়েছে এই ছবি। এটা আমার ভাল লাগার আরো একটা কারণ। বেশিরভাগ পরিচালক ‘সাহসী’ দৃশ্য দেখানোর অজুহাত খোঁজেন। কিন্তু ইনি তার ধারকাছ দিয়েও যান নি। আর তাই, আমি দুবার আয়নাবাজি দেখে ফেলেও তৃতীয়বারের মত আমার মা আর খালামণিদের নিয়ে মুভিটা দেখতে যাওয়ার কথা ভাবছি। কারণ আমার বিব্রত হওয়ার মত কোন কারণ পরিচালক ঘটান নি।
স্বপ্নের মত একটা রোমান্স দেখানো হয়েছে।নায়কের খ্যাতির প্রতি তেমন মোহ নেই। অভিনয় করার জন্য তার রক্ত খেলা করে। তাই সে বাস্তব জীবনে অভিনয় করে। নাটকে সিনেমায কোন চেষ্টা করে নি। নায়িকা ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া শেষ করে বাড়িতে বসে আছে সন্তুষ্টচিত্তে। সামাজিক প্রত্যাশার চাপটা যদি না নিতাম, তাহলে আমরা বেশিরভাগ মানুষই বোধহয় নায়িকার মত এরকম একটা শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবন বেছে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তা হবার উপায় নাই। তাই পর্দায় কিছুক্ষণ স্বপ্নের মত জীবনটা দেখতে বড় ভাল লাগছিল। নায়িকা রোজ নৌকায় করে নায়ককে দেখতে আসবে। আ কাপ অব কাপুচিনোর বদলে রঙচায়ের জীবনের সৌন্দর্যটাকেই সে বেছে নিচ্ছে। খুব বেশি কিছু না জেনেও ভালবেসে ফেলার রোগটা টিনএজে থাকে। কিন্তু এখানে দুজন ম্যাচিউরড মানুষকে দেখানো হল যারা জীবনটাকে জেনেবুঝে উপভোগ করতে চাইছে।
বৃষ্টির শটগুলো ভাল্লাগছে। এক এক সময় একটা ার্থ প্রকাশ করেছে। কখনো কখনো অসহায়ত্ব, কখনো, ঘোর অন্ধকার জীবনে ঢোকার পূর্বমুহুর্ত আবার কখনো সবকিছু ধুয়ে যাওয়ার ব্যঞ্জনা।
Tilt Up আয়নাবাজি কেন বলছি? কারণ বছরখানেক আগে একবার বাসার গেট দিয়ে ঢোকার সময় অমিতাভ রেজাকে দেখেছিলাম। আমি গেট দিয়ে ঢুকছিলাম আর উনি বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তার মুখটা আমার মোটেই পরিচিত ছিল না। কিন্তু তার চেখের দৃষ্টিটা আমার বড় অদ্ভূত লেগেছিল। কেমন যেন মাথাটা নীচু করে রেখে চোখ উঁচিয়ে তাকানো। তার কিছু লাইভ ভিডিওতেও দেখলাম একই কাহিনী। দৃষ্টিটা দেখে মনে হয়, উনার চোখমুখ বলে উঠছে-Tilt Up! তার দৃষ্টিটা এমন অদ্ভূত বলেই বোধহয় তিনি জগতটাকে আমাদের চাইতে একটু অন্যভাবে দেখেন। আমাদের মত একরৈখিক দৃষ্টি না বলেই হয়ত এমন একটা মুভি বানানো তার পক্ষে সম্ভব হল।।
অবশ্য আমি এখনো ভেবে পাই না, ভদ্রলোক বাংলাদেশী মুসলমান নিয়ে এমন অদ্ভূত বয়ান কেন দিয়েছিলেন? ইচ্ছে করে বিতর্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন? যাতে মানুষ বিষয়টা কী তা বোঝার জন্য হল অবধি যায়?নাকি পুরো পরিবার একসাথে বসে মুভিটা দেখতে পারবে (যেটা ভারতীয় মুভির ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে না) এই বিষয়টা বোঝাতে গিয়ে এই কথাটা বলেছিলেন? কী জানি! বড়মাপের শিল্পীরা যে বড় মাপের ব্যবসায়ী হবেন না, এমন তো কোথাও লেখা নেই। তবে উনি ব্যবসা করুন আর যাই করুন, এরকম আরো মুভি বাংলাদেশে তৈরি হোক।
টেইক আ বাও, #অমিতাভরেজা। আপনার অজান্তেই আপনি বহু বাঙালি বাংলাদেশীর ব্যক্তিগত অানন্দ আর গৌরবের কারণ হয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
Merry Christmas! I sent an email to Kent Scott regarding the 20/20 Vision videos your ministry produced this year. We were wondering if they have been edited yet and are available for distribution yet? Blessings, Calvin Conkey
LikeLiked by 1 person