“কই গ্রেট বৃটেনে তো কেউ না খেয়ে মরতে পারে না!…জার্মানি, আমেরিকা, জাপান এ সকল দেশে তো কেহ শোনে নাই- কলেরা হয়ে কেহ মারা গেছে? … ওসব দেশে তো মুসলমান নাই বললেই চলে। সেখানে আল্লার নাম লইবার লোক নাই একজনও; সেখানে আল্লার গজব পড়ে না। কলেরা, বসন্ত, কালাজ্বরও হয় না। আর আমরা রোজ আল্লার পথে আজান দিই, নামাজ পড়ি, আমাদের উপর গজব আসে কেন?”
কী মনে হচ্ছে? উপরের লাইনটা কোন নাস্তিকের লেখা? তাহলে শোনেন, ঠিক আগের প্যারায় লোকটা কী লিখেছে!
“এই দেশের হতভাগা লোকগুলি খোদাকে দোষ দিয়ে চুপ করে থাকে। ফসল নষ্ট হয়েছে, বলে আল্লা দেয় নাই, না খেয়ে আছে, বলে কিসমতে নাই।…আল্লা মানুষকে এতো দিয়েও বদনাম নিয়ে চলেছে…ডাক্তারের অভাবে, ওষুধের অভাবে, মানুষ অকালে মরে যায়- তবুও বলবে সময় হয়ে গেছে। আল্লা তো অল্প বয়সে মরবার জন্য জন্ম দেয় নাই। শোষক শ্রেণী এদের সমস্ত সম্পদ শোষণ করে নিয়ে এদের পথের ভিখারি করে না খাওয়াইয়া মারিতেছে।”
কতখানি স্বচ্ছ চিন্তাশক্তি আর অকপটতা থাকলে এইরকম সহজ করে কথাগুলো লেখা যায় ! মানুষটা বুঝিয়ে দিল নিজেকে প্রগ্রেসিভ প্রমাণ করার জন্য অহেতুক ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দরকার নেই, আবার ধার্মিক প্রমাণ করার জন্য হেফাজতিদের তোষণ করারও দরকার নেই। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস আর নিজের সামর্থ্যের সম্মিলন না ঘটালে মুক্তি নেই। এই সম্মিলন ঘটাতে বুকে বল লাগে, আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস ও কাজে সততা লাগে, নিজের লোকগুলোর জন্য আকাশ সমান ভালবাসা থাকা লাগে। পুরো বাংলাদেশকে নিজের সন্তান ভাবা লাগে। আর হ্যাঁ, মানুষটার নামটা শেখ মুজিবুর রহমান হতে হয়। তাহলেই এত সরল ভাষায় এই জটিল কথাগুলো বলা যায়!
অসীম মুগ্ধতা নিয়ে পড়ছি ‘কারাগারের রোজনামচা’। স্যালুট, পিতা।
পড়তে আগ্রহ হচ্ছে। হাতের কাছে বইটা পেলেই পড়ে নিবো।
LikeLike
বইটা চমৎকার। 🙂
LikeLike