​ছদ্ম পুরুষবাদী থেকে সাবধান

(লেখাটি ৩১ জুলাই, ২০১৭ উইমেন চ্যাপ্টারে ছাপা হয়েছিল)

নতুন একটা ফ্যাশন চালু হয়েছে- নারী পরিচয়কে ব্যবহার করে পুরুষবাদের জয়গান গাওয়া। সুচিন্তিত, যৌক্তিক, ভিন্নমতের প্রতি আমি বরাবরই শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু নিজের মতামত প্রচার করতে গিয়ে কেউ যদি একটা গোটা গোষ্ঠীকে অভব্য ভাষায় আক্রমণ করে, তাহলে, সেটা ভারি আপত্তিকর। 

আমার এই লেখাটি মূলত একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া। এক অনলাইন কাগজে অত্যন্ত আপত্তিকর শিরোনামের একটি লেখা চোখে পড়ল – “যে নারী পুরুষের প্রিয় হতে পারে না, সেই হয়ে ওঠে নারীবাদী।“ এই অদ্ভূত, একপেশে শিরোনাম দেখে বিস্মিত হলাম। কিন্তু ভীষণ বিপর্যস্ত লাগল যখন দেখলাম লেখাটি লিখেছেন একজন নারী। লেখার ছত্রে ছত্রে তার এই নারী পরিচয়কে তিনি তার আক্রমণের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

লেখার আপত্তিকর অংশগুলো চিহ্নিত করা যাক।

প্রথমত, তিনি একটি জেনারালাইজেশন করেছেন- সকল নারীবাদীই পুরুষের অপ্রিয়। ‘সকল গরু ঘাস খায়’এর মত একটি সহজ সমীকরণ টেনেছেন। যে কোন আধিপত্যবাদী কুতার্কিকরা তাই-ই করেন। যেমন, সীমিত জ্ঞানের অধিকারী শাদা আধিপত্যবাদীরা সকল কালো মানুষকে ক্রিমিনাল মনে করেন। উনিও তাই করলেন। অথচ, আমি তাকে ভূরি ভূরি উদাহরণ দেখাতে পারব যেখানে একজন নারীবাদী মেয়ে সুখে শান্তিতে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ী নিয়ে সংসার করছে। সেরকম অনেক মেয়ে আমার ফ্রেণ্ডলিস্টেই আছে- কেউ পেশায় সাংবাদিক, কেউ শিক্ষক, কেউ চিকিৎসক। অসংখ্য পুরুষবাদীর মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে সেই নারীবাদী মেয়েরা তাদের প্রতিবাদী ভূমিকার ক্ষেত্রে স্বামীর সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছেন; তারা পুরুষের প্রিয়। অতএব, পুরুষের স্বীকৃতি আদায়ে ব্যর্থতা = নারীর নারীবাদী হয়ে ওঠা জাতীয় অনুসিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হল।

দ্বিতীয়ত, পুরুষের প্রিয় হয়ে ওঠাটাই কি একটা মেয়ের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য? ধরা যাক, একটি মেয়ে সংবাদপাঠিকার কাজ করেন। তা, তার জীবনের প্রথম সংবাদ পাঠের পর তিনি কি শুধুই পুরুষ অডিয়েন্সের মতামত নেবেন? কোন মেয়ে যদি তাকে বলেন, আপু, আপনার খবর পড়া আমার খুব ভাল লেগেছে, তাহলে, সেই সংবাদপাঠিকা কি বলবেন যে আপনি একটা মেয়ে, তাই, আপনার কমপ্লিমেন্ট আমি নেব না! এমন কোন পেশার কথা তো আমি মনে করতে পারছি না যেখানে টার্গেট অডিয়েন্স শুধুই পুরুষ। একমাত্র যৌনকর্মী এবং জেন্ডার স্পেসিফিক কোন প্রোডাক্টের বিক্রেতা ছাড়া আর কেউ বোধহয় নির্দিষ্ট একটি লিঙ্গকে টার্গেট করে থাকেন না।

যে কোন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ অন্যের স্বীকৃতি চায়। আমি যদি সাজগোজ করি, তাহলে যে কারোর মুখ থেকে প্রশংসা শুনতেই আমার ভাল লাগে। অফিসে আমি একটা নতুন ড্রেস পরে আসার পর আমার সহকর্মীরা যদি সেটা খেয়াল করে, আমার ভাল লাগে। সে সহকর্মী পুরুষই হোক, আর মেয়েই হোক। আমার জুনিয়র মেয়েটা আমার লুক নিয়ে খুব মাথা ঘামায়। আমার ড্রেসগুলো তার মুখস্থ। কখনো কখনো সে আমাকে কোথাও যাওয়ার আগে বলে রাখে, আপু, ওই থ্রী-পিসটা পরলে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে, কাল ওইটা পরে আসবা। কিংবা এই ওড়নাটা এই জামার সাথে ম্যাচ করে না, এটা পোরো না। আমি ওর মতামত গুরুত্ব দিয়ে শুনি। কোন কোন ছেলে সহকর্মী আমার নতুন দুল দেখে তারিফ করে। কেউ কেউ আবার এটাও বলে, এই দুলটা কালকের জামাটার সাথে বেশি মানাত। একজন তো আমার গিফট কেনার সময় এটাও বুঝতে পারে, কোন রংটা আমার পছন্দ হবে, আর কোনটা হবে না। অথচ আমি আমার প্রিয় রং নিয়ে তাকে কিছু বলি নি কখনও। এদের মতামতও আমার কাছে সমান গ্রহণযোগ্য। আমরা প্রিয় হতে ভালবাসি। আমরা স্বীকৃতি চাই। তবে সেটা নির্দিষ্ট করে কেবলই একটি শ্রেণীর কাছ থেকে নয়- নারী-পুরুষের উভয়ের স্বীকৃতি পেতেই আমাদের ভাল লাগে। এবার কি ওই লেখিকা আমাকে উভকামী বলবেন? বলতেও পারেন, কারণ পুরুষের প্রিয় হতে না চাওয়া মেয়েদের উনি সমকামী বা হিজড়া মনে করেন। 

না, বেশিরভাগ মেয়েই পুরুষের গায়ে পড়া প্রিয়ত্ব এড়িয়ে চলে। আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় কখনোই চাইব না, একটা অজানা ছেলে আমাকে দেখে, ‘ওয়ে সুন্দরী’ বলে উঠুক, কিংবা আমার শরীরের কোন বিশেষ অংশের দিকে তাকাতে তাকাতে পথ চলুক। না, এই ধরণের অসুস্থ প্রিয়গিরি আমরা চাই না। এটাকে ইভটিজিং বলে, অ্যাপ্রিসিয়েশন বলে না। অ্যাপ্রিসিয়েশন আর হ্যাংলামির মধ্যে তফাৎটা বুঝতে হবে। প্রশংসা, স্বীকৃতি, আমার অ্যাপেয়ারেন্স নিয়ে মন্তব্য আমি শুধু তাকেই করতে দিই যাকে আমি স্পেস দিই। একবার অফিস থেকে বাসায যাওয়ার পথে এক শ্বেতাঙ্গ বিদেশী আমাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে আমাকে আর আমার সহকর্মীকে দেখে চিৎকার করে উঠল, “সুন্দরী মহিলা!” কথাটা সে বাংলায় বলেছিল, বিদেশী টানে। আমি আর আমার সহকর্মী সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকালাম লোকটার দিকে। আমাদের ক্রুদ্ধ দৃষ্টি দেখে লোকটা চুপচাপ কেটে পড়েছিল। আমি পরে এই ঘটনাটা আমার এক আমেরিকান বন্ধুর সাথে শেয়ার করেছিলাম- ওর ভুল ভাঙানোর জন্য। এই একই ঘটনা কোন বাঙালি ছেলে যদি বিদেশী মেয়ের সাথে করত এটাকে ওরা ইভটিজিং বলত। তাই, ওকে সাবধান করে দিলাম যেন জেনারালাইজেশন করার আগে দুবার ভাবে। 

কোনধরণের জেনারালাইজেশন আমি সহ্য করতে পারি না। সেটা যাদের নিয়েই করা হোক না কেন। এমনকি কেউ যদি বলে পুরুষ মানেই চরিত্রহীন, আধিপত্যকামী জন্তু-তবে সেই কথারও প্রতিবাদ করি আমি। কারণ আমার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষটিও একজন পুরুষ। যখনই একজন জেনারালাইজেশন করে কথা বলে, তখন তার বৌদ্ধিক স্তর নিয়ে আমার সন্দেহ হয়।

এবার আসি তৃতীয় পয়েন্টে। উনি ‘নারীবাদী’ কথাটিকে অনেকটা গালির মত করে ব্যবহার করেছেন। নারীবাদ এবং মানবতাবাদকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। উনার মতে, নারীবাদীরা মানবতাবাদী নন। আমার প্রশ্ন, নারী কি মানুষের বাইরে? এই পৃথিবীতে অসংখ্য সমস্যা এবং বিষয় আছে। সমস্ত বিষয় নিয়ে সবার সমান ইন্টারেস্ট থাকে না। কে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন সেটা নির্দিষ্ট করে বুঝার জন্য পরিবেশবাদী, নারীবাদী, বস্তুবাদী, ভাববাদী বলে ডাকা হয়।  পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয় নিয়ে যারা কাজ করে, তাদের যদি ইতিবাচক অর্থে পরিবেশবাদী বলা যায়, তাহলে নারীদের অধিকার বিষয়ে যারা কাজ করেন তাদেরকে এমন নেতিবাচকভাবে নারীবাদী বলা হবে কেন?

এই কেন-র উত্তর আছে আধিপত্যবাদী পুরুষের মিথ্যে প্রচারণায়। নারীবাদী মানেই দা-কাটারি হাতে মারমুখী কাউকে প্রেজেন্ট করা হয়। সংকীর্ণচিত্ত মানুষের ধারণা, নারীবাদী মানেই পুরুষালি। কপালে টিপ পরা, চোখে কাজল দেয়া নারীবাদীর সংখ্যা কিন্তু অনেক। অথচ, এই সমালোচকরা সেগুলো সযত্নে এড়িয়ে যান। কারণ নারীবাদীকে পুরুষালি প্রমাণ করতে পারলে সেইসব নারীকে আনঅ্যাট্রাক্টিভ (তাদের চোখে) বলে প্রমাণ করতে সুবিধা হয়। এবং তখন নারীবাদকে ফ্রাস্টেশনের ফলাফল হিসেবে প্রমাণ করতেও সুবিধা হয়। অথচ নারীবাদ একটা বিবেকবান মানুষের সচেতন সিদ্ধান্তও হতে পারে। কিন্তু এটা তারা মানবেন না।

এদের জন্য সবচেয়ে উচিত জবাবটা দিয়েছিলনে এমা ওয়াটসন, তার ইউএন স্পীচে। উনি বলেছিলেন, “…my recent research has shown me that feminism has become an unpopular word. Apparently I am among the ranks of women whose expressions are seen as too strong, too aggressive, isolating, anti-men, and unattractive.” । স্পীচের আগে তাকে ফেমিনিজম শব্দটা ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তারা ভেবেছিল, এতে করে তার বক্তব্যের ক্ষেত্রটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। উনি তাদের ভুল প্রমাণ করেছিলেন। বক্তব্যের প্রতিটি লাইন দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন কেন নারীবাদ নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রয়োজনীয়। উনি বলেছিলেন, “We don’t often talk about men being imprisoned by gender stereotypes, but I can see that they are and that when they are free, things will change for women as a natural consequence”। ভাল কথা, এমা ওয়াটসনকে কার কার যেন আনঅ্যাট্রাক্টিভ মনে হয়? কার কার মনে হয় যে উনি পুরুষের প্রিয় হতে সমর্থ নন? একটু হাত তুলুন, আপনাদের দেখি।

আর হ্যাঁ, কেউ যদি পরিপাটী হয়ে সেজে না থাকে, তবে সেটাও কিন্তু তার ব্যক্তিগত অভিরুচি। অনেক মানুষ টাকা থাকা সত্ত্বেও সাধারণ জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন। ঠিক তেমনি অনেক মেয়ে সাজতে পছন্দ করেন না, জিন্স পরেন। সেটাও তার ব্যক্তিগত ভাল লাগা, ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপার। এবং অনেক মেয়েকেই সাধারণ একটা জিন্স পরেও শাড়ির চাইতে বেশি সুন্দর লাগে। কারণ ওটাই তার স্টাইল। সে ওটাতেই স্বচ্ছন্দ। কেউ যদি সংসার করতে না চায় তবে সে স্বাধীনতাও তার আছে। আমি আপনি কে সেগুলো ডিক্টেট করার? এ জগতে অনেক কিছু করার আছে। আপনার হাতে যদি অঢেল সময় থাকে, তাহলে সেগুলোর পিছনে এনার্জি খরচ করুন।

নারীবাদী মানেই পুরুষ বিরোধী নয়। কেউ যদি পুরুষকে নিয়ে কোন খারাপ মন্তব্য করেন, তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত সংকীর্ণতা। এটার সাথে নারীবাদকে গুলিয়ে ফেলার কোন কারণ নেই। আমি কখনো ইচ্ছে করে নিজেকে নারীবাদী বা অ্যাক্টিভিস্ট বলে পরিচয় দিতে যাই নি। কিন্তু আমার কাজগুলোর সাথে নারীবাদ হয়তো মিলে যাবে। কারণ আমি নারী এবং পুরুষ উভয়কেই সম্মান করে চলি।

নারীবাদ মানেই পুরুষের করুণা পিয়াসী নয়। আমি বাসের সীটে বসা অবস্থায় যদি কোন বৃদ্ধ পুরুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, তাহলে আমার সীটটা তাকে ছেড়ে দিই। ওভারব্রীজের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়, এক ভদ্রলোককে দেখলাম এক হাতে ক্রাচ নিয়ে আর এক হাতে খোলা ছাতা নিয়ে নামছেন। ভদ্রলোক খোঁড়া নন, তবে হয়তো পা মচকে গিয়েছিল, তাই ক্রাচ নিয়েছেন। ক্রাচের কারণে ডান হাতের ছাতাটা কাত হয়ে গিয়েছে। তাই কাঁধে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। আমি তার পিছন পিছন নামতে গিয়ে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম। জানতে চাইলাম, “ভাইয়া, আপনার ছাতাটা কি আমি সোজা করে ধরব আপনার মাথায়?” অপরিচিত একটা মেয়ের কাছ থেকে এরকম একটা অদ্ভূত কথা উনি প্রত্যাশা করেন নি। একটু অপ্রস্তুত হয়ে হেসে বললেন, “না না ঠিক আছে, ধন্যবাদ।“ ঠিক সেই মুহুর্তে দেখলাম, আমার বাসটা ব্রীজের নীচ দিয়ে চলে যাচ্ছে। তাই, কথা না বাড়িয়ে হুড়মুড় করে নেমে এলাম। তবে উনি ছাতা ধরতে বললে বিনা দ্বিধায় আমি ছাতা ধরতাম। এইসব কাজগুলো যখন আমরা করি, তখন নারী-পুরুষ পরিচয়টা সেখানে মুখ্য নয়। বাস্তব জ্ঞান, এবং মানুষের প্রয়োজনের প্রতি সম্মানবোধটা ওখানে মুখ্য। আবার নারীবাদ মানেই অযৌক্তিক বিদ্রোহ নয়। নৌকা থেকে নামার সময় পিচ্ছিল কাদায় যাতে পড়ে না যাই সেজন্য আমার বন্ধুর বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা আমি বিনা দ্বিধায় ধরি। পুরুষের সাহায্য নেব না শীর্ষক তর্ক সেখানে আমি তুলি না। কারণ আমরা একে অন্যের সাহায্য নিয়েই বাঁচি। 

ওই লেখিকার একটি লেখার বিপরীতে আমি এত লম্বা লেখা কেন লিখলাম? কারণ উনি গোটা লেখাতে ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক সমতার কথা বলে শেষ মেষ গিয়ে একটি বোমা ফাটিয়েছেন- “যেকোনো কারণেই হোক পুরুষের নারীর উপর আধিপত্যকে আমি খারাপভাবে দেখি না”। অত্যন্ত ভয়ংকর এবং ক্ষতিকর একটি লাইন। এই একবিংশ শতাব্দীতে কেউ কারো উপর আধিডত্য কেন করবে? আর ঠিক এই লাইনটি এবং লেখার শিরোনামের কারণে বহু পুরুষ এই লেখাটি শেয়ার করে চলেছেন। কিছু ইন্টেলেকচুয়াল নামধারী পুরুষ চক্ষুলজ্জার খাতিরে এই লেখিকার মত এত স্পষ্টভাবে তাদের অভিমতটা জানাতে পারেন না। এই লেখিকা তাদের মুখপাত্র হয়েছেন। আর আমার এবং আমার মত অনেক মেয়ের আপত্তি সেখানেই।

2 comments

  1. অসাধারণ লিখা। খবই ভালো লাগলো। দুই একটা টাইপিং মিস্টেইক আছে। মনে রাখার মতো লাইন

    “যখনই একজন জেনারালাইজেশন করে কথা বলে, তখন তার বৌদ্ধিক স্তর নিয়ে আমার সন্দেহ হয়।”

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s