‘ভাইয়া’র স্বজনেরা

সৃষ্টিকর্তা বড় খেয়ালী। যেটা যেখানে দেওয়ার কথা সেটা সেখানে দেন না। উনি সারপ্রাইজ দিতে ভালবাসেন!

আজ বিকালে নিচতলা থেকে বাসার লিফটে উঠলাম। আমার সাথে একটা আট/নয় বছর বয়সী মেয়েও উঠল।

লিফটে উঠেই বড় বড় চোখ মেলে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কয় তলায় থাকেন?” কোন এক অদ্ভুত নিয়মে সব বাচ্চা মেয়ের চোখ বড় বড় হয় । পরিষ্কার শাদা চোখে গভীর কাল দুটো মণি থাকে। তবে চাইনিজ আর জাপানিরা এই হিসেবের বাইরে। ওরা আমার কাছে অতি বিস্ময়ের বস্তু। যেখানে চোখ থাকার কথা, সেখানে আছে একটা করে কাল আড়াআড়ি দাগ। দু পাশে দুটো দাগ। এই দিয়ে তারা কী করে দুনিয়া দেখে আমি ভেবে পাই নি। অবশ্য দাগ থেকে যে ভাল কিছু হয় তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ স্টিভ ওয়াহ। চোখের জায়গায় তারও শুধু দুটো দাগ। কিন্তু সেই দাগের মধ্যে দিয়ে তাকিয়েই তিনি পুরো মাঠ দেখে ফিল্ডিং সাজাতেন, অধিনায়কত্ব করতেন। আমি আমার নাকের দুপাশে দুটো জানালা নিয়ে বসে আছি। তবু হাতের মোবাইল হাতে রেখে খুঁজে বেড়াই। আর স্টিভ ওয়াহ তার নাকের দুপাশের ভেন্টিলেটর দিয়ে তাকিয়েই বিশ্বজয় করে গেছেন।

যে দৃষ্টিশক্তি আমার ঢাউস মণিতে থাকার কথা, তা ছিল স্টিভ ওয়াহর দাগের আড়ালে। কারণ সৃষ্টিকর্তা সারপ্রাইজ দিতে ভালবাসেন।

যাহোক, আবার লিফটে ফিরি-যেখানে আমার মায়াবী বিশালাক্ষী মেয়েটি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বড় বড় চোখের বাচ্চা মেয়েদের প্রতি আমার অদ্ভুত একটা ভাল লাগা কাজ করে। বললাম, আমি পাঁচতলায় যাব। মেয়ে বলল, ‘ওটা কি আপনার নিজের বাসা?” আমার সাইজের সাথে কি মালিকানা ম্যাচ করছে না? বাসা তো যথেষ্ট ছোট-আমার সাইজের তুলনায়ও বেশ ছোট! হেসে বললাম, “হ্যাঁ, ওটা আমার নিজের বাসা।” এবার বলল, “আপনি কার সাথে থাকেন?” হাসি চেপে বললাম, “আমি আমার মা-বাবার সাথে থাকি।”

ওর প্রশ্নের ধরণ বেশ প্রশংসনীয়। দুটো প্রশ্ন করে আমার সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটো তথ্য সে আদায় করে ফেলেছে- আমি ওই অ্যাপার্টমেন্টের মালিক কীনা এবং আমার বৈবাহিক অবস্থা কী।

এই বাচ্চার ঘটে যেটুকু বুদ্ধি আছে, যেটুকু ভদ্রতাবোধ আছে, তা আমার চির অপরিচিত ‘ভাইয়া’র প্রাপ্তবয়স্ক আত্মীয়-স্বজনের নেই। রাস্তা-ঘাটে, বাসে প্রায়ই সেই নাম না জানা ‘ভাইয়া’-র আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমার দেখা হয়। দু একটা কথার পরেই তারা জানতে চান, “ভাইয়া কী করেন?” বলতে ইচ্ছে হয়, “আপনার ভাইয়া কী করেন, তা আপনিই ভাল জানেন, আপু। আমি কী করে জানব তার ঠিকুজি কুষ্ঠি? তার সাথে পরিচিত হবার কোন পরিকল্পনা আমার নেই।”

ফাইন, জানতে ইচ্ছে হয়েছে- আমি বিবাহিত কী না। প্রথম কথা, এত অল্প পরিচয়ে এত ব্যক্তিগত প্রশ্ন আপনি করবেন কেন? আর করবেনই যদি, এত ঘুরপথে জিজ্ঞেস করবেন কেন? সরাসরি জিজ্ঞেস করেন! এত আত্মীয়তা পাতানোর দরকার তো নাই!

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট মানুষ বড় বিচিত্র জীব! আর বাঙালি বিচিত্রতম!

2 comments

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s