আজ থেকে ঠিক পাঁচ মাস আগে আমার আন্তরিক অনিচ্ছাসত্ত্বেও জীবনটা সরকারের সম্পত্তি হয়ে গিয়েছিল। ব্যাপক অর্থে, প্রতিটি নাগরিকই রাষ্ট্রের সম্পত্তি বা সম্পদ। কিন্ত অন্য কোন নাগরিকের হাতে মোটা মোটা পাঁচ/ছয়টা বিধি-বিধানের বই তুলে দিয়ে তা মুখস্থ করতে বলা হয় না। সরকারি কর্মচারীকে এক একটা থান ইটের মতন বই মুখস্থ করে পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়। সেসব বইয়ের পাতায় পাতায় থাকে “কী করিলে কী হইবে” শীর্ষক নীতিমালা। অপরাধের সাথে পরিচয় হওয়ার আগেই সেসব অপরাধের দণ্ড মুখস্থ করে ফেলতে হয়।
ভাবতে বসলাম, এই পাঁচ মাসে আমার অনুভূতি কী? অনুভূতি অবশ্যই মিশ্র। তবে শ্রেষ্ঠ অনুভূতিটা হয় প্রতিদিন সকালবেলায়। কানে জাতীয় সংগীতের সুর ভেসে আসার সাথে সাথে প্রত্যেকে যে যেখানে থাকে দাঁড়িয়ে যায়। এই রীতিটা আগে কখনো কর্মস্থলে অণুসরণ করতে হয় নি। এখন করি। অত্যন্ত পবিত্র একটা অনুভূতি হয় তখন।
যা কিছু নথিপত্র নাড়াচাড়া করি, তা বেশিরভাগই বাংলায়। অদ্ভূত অদ্ভূত সব বাংলা শব্দ শুনেছি কয় মাসে- পরিপত্র, অনুবেদন, প্রেষণ, ভবিষ্য তহবিল ইত্যাদি ইত্যাদি অসংখ্য শব্দ। এসব শব্দের সংজ্ঞার্থ মুখস্থ করতে মেলা দিন লেগে যাবে। কারণ আমি একটি সর্বজনস্বীকৃত টিউব লাইট। তবু, শিখতে দেরি হলেও বাংলার এই বহুল ব্যবহার দেখে ভাল লাগে। বাংলা শব্দগুচ্ছের এতখানি ব্যবহার দেখতে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না। বিদেশী সংস্থায় ছিলাম বলেই হয়তো ব্যাপারটা আমার বেশি করে চোখে পড়ে।
এ পৃথিবীর সকল ভাষা-ভাষী তার নিজের মাতৃভাষায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পাক। ভাষার মাসে এবং জীবনের সরকারিকরণের পাঁচ মাস পূর্তিতে এটাই আমার কামনা।
ও হ্যাঁ, আগের অফিসকে মিস করি কী না? সে প্রশ্নের উত্তর আজ আর না দেওয়াই সঙ্গত। কে না জানে, বিয়ে করে প্রাক্তনের গুণ গাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অতএব, সেসব থাকুক আমার অন্তরের গহীনতম প্রদেশে। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।