মাঝে মাঝে মনে হয়, জীবনটা বোধহয় একটা খেলা- পাজল সলভ করার খেলা। সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমাদের প্রত্যেককে হাতে একটা করে পাজল পিস দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। সবাই নিজের নিজের পিসটা ঠিক ঠিক জায়গায় রাখতে পারলে হয়তো একটা পুরো ছবি দেখতে পেতাম। কিন্তু সবাই খেলার সুযোগই পায় না। আমরা সবাইকে বোর্ডের ধারে কাছে আসতেই দিই না। ওর জামা ছেঁড়া, ওর হাসিটা একটু কেমন যেন। আমি ওর সাথে খেলি না। ও খেললে আমি খেলব না। অথচ সবারই খেলার কথা ছিল। সবাইকেই একই সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছেন।
বোধহয়, সুনীলের কোন একটা লেখায় একটা লাইন ছিল। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, ঘাতকেরা গান শোনে কীনা। এরকম প্রশ্ন আমার মনেও জাগত। এরশাদ শিকদার যখন শাহরুখ খানের ‘কয়লা’ মুভিটা দেখত, তখন সে কার পক্ষ নিত? সে-ও কি সাধারণ দর্শকের মত শাহরুখের জয় চাইত নাকি অমরেশ পুরীর জয় চাইত? তার তো অমরেশ পুরীর সাথে নিজেকে আইডেন্টিফাই করার কথা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, এরাও গান গায়, গান শোনে, এরাও মুভি দেখার সময় নায়কের পক্ষ নেয়।
ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকত না। এখনো খুব একটা ঢোকে না।
আমার শুধু মনে হয়, প্রতিটি মানুষ এক একটা চলন্ত উপন্যাস। সে উপন্যাসের পাতায় পাতায় চাপা পড়ে আছে দীর্ঘশ্বাস, আনন্দ, টুকরো টুকরো আকাঙ্ক্ষা। অথচ পুরোটা পড়বার কেউ নেই।
সবাই লিখতে ব্যস্ত। কিন্তু একটা জরুরী কথা কারোর মাথায় থাকে না। আমার উপন্যাসের লেখক আমি একা নই। আরো অসংখ্য মানুষ আছে আমার চারপাশে। তারা সবাই নিজের ডায়ালগ, নিজের অ্যাকশন নিজে হাতে লিখতে চায়। সবচেয়ে মজার কথা হল, অন্যের চরিত্র আর সংলাপটাও আমরা নিজের মত করে লিখতে চাই।
কিন্তু মেলে না। শেষমেশ কারো প্লট কারো সাথে মেলে না। দিনশেষে সবাই এক একটা বিচ্ছিন্ন ছেঁড়া দ্বীপ হয়ে বসে থাকে।