আমি যেদিন শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে বাসে উঠি, একটা মানুষ উদগ্রীব হয়ে বাসের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার তাকে বারবার বলা লাগে, “গাড়ি আসছে, এখানে এভাবে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ো না। সরে দাঁড়াও।”
বাসের কন্ডাক্টরকে বারবার করে বলে দেয়, “ওকে শ্রীনগরে নামিয়ে দেবেন। ও শ্রীনগর সরকারি কলেজের ইংরেজির শিক্ষিকা।”
বাসের কন্ডাক্টর বারবার মাথা নাড়ে। “হ্যাঁ, আংকেল, আপনি চিন্তা কইরেন না। আল্লাহ ভরসা।”
আমার এদিকে মেজাজ খারাপ হতে থাকে। কন্ডাক্টরকে এত কথা বলার কী আছে? আমি কোন কলেজের শিক্ষক সেটা জেনে কন্ডাক্টর কী করবে?
গাড়ি একটা টান দেয়। ২/৩ সেকেন্ডের মধ্যে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে প্যাসেঞ্জার নিতে। সেই মানুষটা আবার দ্রুত হেঁটে এসে গাড়িটা ধরে ফেলে। আমার বকুনির কারণে এবার আর জানালার কাছে আসে না। জানালার সোজাসুজি ফুটপাতের উপর দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে।
গাড়ি একটা পর্যায়ে ছেড়ে দেয়, আর দাঁড়ায় না। একদিন এক ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে, এইটা কে, ম্যাডাম? আপনার আব্বু?” আমি মাথা নাড়ি।
ড্রাইভার একটু হেসে বলে, “তাইতো কই, এত খেয়াল তো আর কেউ রাখবো না!”
অত দূরে থেকে বাবা বুঝতে পারে না। কিন্তু প্রতিদিন আমার গলার কাছটা ধরে আসে। কেমন কান্না পায়। ফুটপাতের উপর দাঁড়ানো মানুষটাকে একটা শিশুর মত মনে হয় – আমাকে যার মা হয়ে উঠতে হবে দিনে দিনে। তার অসীম ভালবাসার খানিকটা ফেরত দিতে হবে।
কতটুকু দিতে পারব? শৈবাল দীঘিকে যতটুকু দিতে পেরেছিল ঠিক ততটুকু।
শুভ বাবা দিবস।
দীঘির গল্পটা ভালো লিখেছো,শ্যামা।
LikeLiked by 1 person
পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
LikeLike