আমি একটা ইন্টারভিউয়ের জন্য তৈরি হচ্ছি। ইন্টারভিউটা ঠিক কী বিষয়ক জানি না। তবে হলে থাকি এবং ইন্টারভিউ যিনি নেবেন, তাকে সবাই খুব ভয় পায়। আর কোনো এক অজানা কারণে ইন্টারভিউটা প্রত্যেকটা হলবাসীর জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ।
কয়েক দিন ধরেই ইন্টারভিউ নিয়ে চাপা উত্তেজনা। আমার ভেতরেও টেনশন কাজ করছে। ভদ্রলোক যে ঘরে বসে থাকেন, সে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ থাকে। উনার অ্যাসিস্ট্যান্ট কখনো দরজা খুললে বাইরে থেকে উনাকে দেখা যায়। অদ্ভূত সুন্দর একটা চেহারা। টিভিতে হুবুহু এই চেহারার এক অভিনেতাকে দেখেছি। খুব লম্বা – স্বপ্নপুরুষ টাইপ একটা চেহারা।
ভদ্রলোক কী ধরণের প্রশ্ন করতে পারেন? সাইকোলজিক্যাল টেস্ট টাইপ কিছু? আমি যদি কোন উত্তর দিতে না পারি? আচ্ছা, উনার কাছে নিজেকে এত প্রমাণ করার ইচ্ছে হচ্ছেই বা কেন?
আজ হঠাৎ কয়েকটা মেয়েকে তার রুমের বাইরে বসে থাকতে দেখলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার। জানলাম, গতকাল থেকে ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেছে। হায় হায়, আমি রোজ এদিক দিয়ে যাওয়া আসা করছি। আর খোঁজই পেলাম না! আমার সিরিয়াল মিস হয়ে গেছে। আমার পরিচিত একটা মেয়ে ছিল সিরিয়ালের দায়িত্বে। সে বলল, সে আমাকে জানাতে ভুলে গেছে। আরো বলল, আমার ইন্টারভিউ নেয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। একটু অপেক্ষা করতে বলল।
সবাই দেখলাম, মিষ্টি খাচ্ছে। জানতে চাইলাম, কীসের মিষ্টি। জয়ন্তিকা নামে কোন মহিলার জন্মদিনের মিষ্টি। এই মহিলা নাকি ইন্টারভিউয়ারের জীবনের বিশেষ মানুষ। সেই বিশেষ মানুষটার সাথে সমাপ্তিটা মিলনান্তক নয়। সহকারী মেয়েটার চোখেমুখে কেমন একটা জ্বালা। এই লুকটা আমি চিনি। ঈর্ষা আর অক্ষমতার দৃষ্টি।
অ্যাসিস্ট্যান্ট মেয়েটা যেন কোনদিকে চলে গেল। অন্যরাও সবাই চলে গেল এদিক ওদিক। ব্রেক চলছে। হঠাৎ ভেতর থেকে বেল বেজে উঠল। সহকারী মেয়েটা তো এদিকে নেই! ওর নম্বরটা বের করার চেষ্টা করছি। অমনি বেলটা আবার বেজে উঠল। আমার কি ভেতরে গিয়ে বলা উচিত যে সহকারী এখন নেই? সেটা কি ঠিক হবে? আমার সিরিয়ালটাও তো মিস হয়ে গেছে! ঢোকাটা বোধহয় উচিত হবে না। কিন্তু উনি নিশ্চয়ই কোন প্রয়োজনে ডাকছেন।
আমি ভিতরে গেলাম। ভদ্রলোক জিজ্ঞাসু মুখে আমার দিকে তাকালেন। আমার ভেতরে খুব টেনশন কাজ করছে। উনি আমাকে কী প্রশ্ন করবেন? আমি তার কোন বোকা বোকা উত্তর দিয়ে ফেলব না তো?
উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
আবারও বেল বেজে উঠল। কিন্তু উনি তো বেল বাজান নি। তাহলে?
ওহ্! বেলের শব্দটা এই ঘরের বাইরে থেকে আসছে। আমার ফ্ল্যাটের দরজায় বেল বাজছে। আমার স্বপ্নের পর্দাটা ভেদ করে রিয়্যালিটি ঢুকে পড়ল।
আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি ভদ্রলোকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার। চোখটা বন্ধ করেই রাখলাম যাতে এই আপাত অপ্রয়োজনীয় রিয়্যালিটি থেকে আবারও ঐ ইন্টারভিউ রুমে ফিরে যেতে পারি। যাওয়া হলো না। চোখের সামনে থেকে ঘরটা মিলিয়ে গেল। জানা হলো না ভদ্রলোক আমাকে কী প্রশ্ন করতেন। আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম কীনা তাও জানা হল না। এমনকি ইন্টারভিউটা কীসের তাও জানা হলো না।
জীবনের অসংখ্য অমীমাংসিত প্রশ্নের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া আরো একটা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ঘুম ভাঙল।