তখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমার বান্ধবী লাইব্রেরি রুমে এসে বলল, ‘তোকে একটা কথা বলব। কথাটা শুনলে তুই রেগে যেতে পারিস। তোর না একটা মন ভালো করার বই আছে? ওটা থেকে কয়েক লাইন পড়ে নে। তারপর কথাটা বলি।’
সেই বইয়ের নাম ছিল ছিন্নপত্র। বইটার মধ্যে কোন জোকস ছিল না। পুতুপুতু প্রেম ছিল না। কিন্তু শিউলি ফুলের মত স্নিগ্ধতা ছিল। নির্জন আনন্দ ছিল। পড়লেই আমার মনে কেমন শান্তি শান্তি লাগত। সেই শান্তির রেশ অনেকক্ষণ থাকত।
আমাকে অনেকে বলে, ‘আহা রে! শ্রীনগরের বাসায় আপনি একা থাকেন? এখন অত বড় বাসায় ফিরে গিয়ে কথা বলার একটা মানুষ পাবেন না?’
আমি গভীর বিস্ময়ের সাথে তাদের এই প্রশ্নটা শুনি। নির্জনতা অধিকাংশ মানুষের কাছে বিষম ভয়ের বস্তু। তারপর হঠাৎ খেয়াল হয়- পৃথিবীর ৯৯.৯% মানুষ ছিন্নপত্র পড়ে নি।
অধিকাংশ মানুষের চোখে noise, crowd আর বাহ্যিক party-ই হল আনন্দের সর্বোৎকৃষ্ট উৎস। আমি তাদের সমালোচনা করছি না। কিন্তু তারা কিছুতেই মানতে চান না যে, আর একদল মানুষ আছে যারা নির্জনতায় গভীর প্রশান্তি খুঁজে পায়। একগাদা মানুষের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকলে বরং এই ২য় প্রকারের মানুষগুলো হাঁসফাঁস করতে থাকেন। খুব কাছের মানুষের কাছে ছাড়া এরা সহজ হতে চায় না।
ছিন্নপত্র আমাকে এই নিস্তরঙ্গ আনন্দটা উপভোগ করতে শিখিয়েছে। মাথার মধ্যে চলতে থাকা পার্টিটাকে এনজয় করতে শিখিয়েছে।
ছিন্নপত্রের কটা লাইন তুলে দিলাম নিচে।
“আজকাল আমার এখানে এমন চমৎকার জ্যোৎস্না হয় যে কী বলব।…একলা বসে বসে আমি যে এর ভিতরে কী অনন্ত শান্তি এবং সৌন্দর্য দেখতে পাই সে আর ব্যক্ত করতে পারি নে। এক দল আছে তারা ছটফট করে ‘জগতের সকল কথা জানতে পারছি নে কেন ‘, আর এক দল ছটফটিয়ে মরে ‘মনের সকল ভাব প্রকাশ করতে পারছি নে কেন’- মাঝের থেকে জগতের কথা জগতেই থেকে যায় এবং অন্তরের কথা অন্তরেই থাকে।”
শুভ জন্মদিন, আমার নিস্তরঙ্গ আনন্দের গুরু।