

হিন্দি সিনেমার একটা জনপ্রিয় পুতুপুতু লাইন আছে। প্রেমিক প্রেমিকাকে পটানোর জন্য বলে, ‘তুমি আমার জীবনে আসার আগে আমি শুধু শ্বাস নিতাম, কিন্তু তুমি জীবনে আসার পরে আমি বাঁচতে শিখেছি।’
আজ এই আপাত সস্তা লাইনটা একজনকে বলার দিন । মাঝে মাঝেই মনে হয়, আমি যদি বাঙালি না হতাম, তাহলে কী হত? আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, সবই আসত জীবনে। কিন্তু সেসব প্রকাশের জন্য ভাষা হাতড়ে বেড়াতে হত। ‘ভাষাহারা মম নীরব বেদনা প্রকাশের লাগি করিত সাধনা।’
আমি যদি বাঙালি না হতাম তাহলে জানা হত না যে কোন একজন মানুষ একাই সমস্ত অনুভূতির অভিধান লিখে যেতে পারেন। জানা হত না যে বুকের মধ্যে ‘সুখের মত ব্যথা বাজতে পারে।‘
নিষ্ফল কোন কাজ শুধু কর্তব্যের খাতিরে করতে গেলে কানে বাজত না, “জয়হীন চেষ্টার সংগীত, আশাহীন কর্মের উদ্যম — হেরিতেছি শান্তিময় শূন্য পরিণাম।” ব্যর্থতাকে মহিমান্বিত করতাম কী করে?
ইগো স্যাটিসফাই করার পরমুহুর্তে বিজয়ীর হাসি হেসে কি বলতে পারতাম, ‘সুখ চাহি নাই, মহারাজ। জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ।’!
আসলেই তো ! ব্যর্থতার দিনগুলোতে, কষ্টের দিনগুলোতে, অব্যক্ত সুখের দিনগুলোতে কে যোগাত ভাষা?
আমি যদি বাঙালি না হতাম, রবীন্দ্রনাথের সাথে পরিচয় হত কোন অনুবাদের মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ পড়তে হত অন্য কোন একটা ভাষায়- একথা ভাবলে আমি শিউরে উঠি। আমার বিদেশী বন্ধুদের চোখে আমি আক্ষেপ দেখেছি- রবীন্দ্রনাথকে মূল ভাষায় না পড়তে পারার আক্ষেপ। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, সে আক্ষেপের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয় নি।
প্রতিটা মনযোগী বাঙালি পাঠকের একটা নিজস্ব রবীন্দ্রনাথ থাকে । দুঃখে, সুখে, প্রেমে, অপ্রেমে- সেই রবীন্দ্রনাথকে খুলে পড়া যায়। নিজের যে অনুভূতির ব্যাখ্যা নিজের কাছে থাকে না, তা রবীন্দ্রনাথের কাছে থাকে। যে কথা এ জীবনে রহিয়া যেত মনে, সে কথা অনায়াসে তারই দ্বারা বলা যায়।
ওহ, ভাল কথা! কাঁচা হাতে এই অপ্রয়োজনীয় ছবিটা আঁকতে গিয়ে মনে হচ্ছে, ‘তোমায় কিছু দেব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা তোমার থাকল প্রয়োজন।’