মানুষের পোড়া কপাল, আর আমার হল পড়া কপাল।
কখনো বাস, কখনো সাইকেল, কখনো রিকশা ইত্যাদি নানাবিধ বাহনের সংস্পর্শে এসে রাস্তা ঘাটে প্রায়ই নিজের পতঞ্জলি দশা দেখি।
আজ আজমপুরে আমার রিকশাকে হঠাৎ করে একটা পিক আপ দিল এক ধাক্কা। প্রথম ধাক্কাটা সামলে ওঠার আগেই দ্বিতীয় ধাক্কা। কায়দা বেকায়দা বিভিন্ন স্টাইলে রিকশার হুডটা ধরে ঝুলে থাকার চেষ্টা করছিলাম। মনে আশা ছিল- ওয়ান্ডার উম্যান না হতে পারি, টিকটিকি বা তেলাপোকা স্টাইলে ঝুলে থাকা যাক। কিন্তু আমার অনুকরণীয় জীবকূলকে কোনদিন ভাল করে অবজার্ভ করা হয় নি বলেই তেনাদের মুখরক্ষা করতে পারলাম না। কাঁধের দুই ব্যাগ নিয়ে পপাত ধরণীতল।
আক্রমণকারী গাড়ি ততক্ষণে আমাকে জানালা দিয়ে এক ঝলক দেখে পগার পার।
দশ পা দূরে গিয়েই সিগন্যালে বেচারা কে থামতে হলো। ছড়ে যাওয়া হাঁটু নিয়ে আমি বিপুল বিক্রমে আমার রিকশাওয়ালাকে নিয়ে পৌঁছে দেখি, এক মোটরসাইকেল আরোহী অপরাধীর কলার ধরে এক একটা ঝাঁকি দিচ্ছে আর একটা করে নতুন নামকরণ করছে। প্রতিটা নামকরণেই অভিনবত্বের ছোঁয়া। ছেলেটার জন্ম পরিচয় একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছে। আমি এগিয়ে যেতেই অন্যরা পথ ছেড়ে দিল।
আমি একটা জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেবার প্রস্তুতি নিয়ে আগালাম।
ওমা, সীটে তো একটা লিকলিকে লিলিপুট বসে আছে ছলছল চোখে। দেখে আমিই বেকুব হয়ে গেলাম। কিন্তু উপস্থিত জনতা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে চেয়ে আছে। কারণ আমি মহামান্যা ভিকটিম! আমার ভাবই আলাদা।
আমি তাই গলা চড়িয়ে বললাম, ‘আপনি রাস্তায় আমাকে ফেলে দিয়ে চলে গেলেন! আমি তো আজ মরেও যেতে পারতাম!
দ্বিতীয় লাইনটা বলে আমার আসলেই মরে যেতে ইচ্ছে হল! এত্ত দুর্বল থ্রো আমার ডায়ালগের। আমাকে দিয়ে পারফর্মেন্স হবে না। হতাশ গলায় বললাম, ‘ভাই, যান, বাড়ি যান।’
আহত হাঁটু আর পড়ন্ত কপাল নিয়ে আমিও বাড়ি ফিরে এলাম।